রেজাল্টকার্ডে লেখা আপনার ভবিষ্যৎ!
রম্য ডেস্ক
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বাঙালির ঘরে ঘরে এখন চলছে দুই বিপরীতধর্মী আবহাওয়ার খেলা। যেসব বাড়িতে সোনার টুকরো ছেলে বা নয়নের মণি মেয়েটি জিপিএ-৫ পেয়েছে, সেখানে বইছে আনন্দের বন্যা আর মিষ্টির মহোৎসব। বাবা বুক ফুলিয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন, “আমার সন্তান আমার মুখ উজ্জ্বল করেছে!”
এর ঠিক উল্টো চিত্র অন্য বাড়িগুলোতে। যেখানে পরীক্ষার্থীর ফল সামান্য এদিক-ওদিক হয়েছে, সেখানে বিরাজ করছে শ্মশানের নীরবতা। মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশের বাড়ির ভাবির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ভাবছেন, “ওনার ছেলেটা গোল্ডেন পেলো, আর আমার ভাগ্যেই জুটলো এইটা! এখন সমাজে মুখ দেখাই কী করে?”
এই আনন্দ-বিষাদের হাটে আশার আলো নিয়ে এসেছেন ফেসবুকের এক ডিজিটাল দার্শনিক। তিনি এমন এক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন, যা আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের সব দুশ্চিন্তা এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেবে। চলুন, সেই যুগান্তকারী ভবিষ্যদ্বাণীটি জেনে নেওয়া যাক।
ক্যাটাগরি-১: জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী (ভবিষ্যৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা)
যারা দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে, গাইড বইয়ের পাতা উল্টে আর স্যারের কোচিং-এর বেঞ্চ গরম করে জিপিএ-৫ নামক সোনার হরিণটিকে বশ করেছ, তোমাদের জানাই উষ্ণ অভিনন্দন!
তোমাদের ভবিষ্যৎ: আজ থেকে বছর বিশেক পর তুমি হবে কোনো এক প্রত্যন্ত উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। সরকারি কোয়ার্টারের ভাঙা ছাদ চুইয়ে যখন বর্ষার জল পড়বে আর হাসপাতালের স্টোরকিপারের সঙ্গে দুটো প্যারাসিটামলের জন্য তোমার তুমুল বাকযুদ্ধ চলবে, তখন এই জিপিএ-৫ পাওয়ার আনন্দ তোমার মনে পড়বে নিশ্চয়ই! মন্ত্রণালয় থেকে আসা অদ্ভুত সব নির্দেশনা দেখে তুমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাববে, “এর চেয়ে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে পড়লেই বোধহয় ভালো ছিল!”
ক্যাটাগরি-২: একটুর জন্য জিপিএ-৫ মিস (ভবিষ্যৎ সচিব)
যারা অক্লান্ত খেটেছ, কিন্তু শেষ মুহূর্তের অসতর্কতায় জিপিএ-৫ নামক উড়ন্ত পাখিটা ফসকে গেছে, তাদের জন্য সমবেদনা। তবে মন খারাপের কিছু নেই, কারণ তোমরাই হলে সচিবালয়ের ভবিষ্যৎ ধারক ও বাহক!
তোমাদের ভবিষ্যৎ: তোমাদের জীবন কাটবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে। অবিরাম মিটিং, অফুরন্ত চা-সিঙ্গারা আর দশ রকমের ভঙ্গিতে “জি স্যার” বলাই হবে তোমাদের দৈনন্দিন রুটিন। তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মন্ত্রী মহোদয়কে একটি পলিসি বোঝানো, যিনি পলিসির চেয়ে মিটিংয়ের সিঙ্গারা ঠিকমতো ভাজা হয়েছে কি না, তা নিয়ে বেশি চিন্তিত।
ভাবছেন, সেই মন্ত্রী কে? জানতে হলে পরের ক্যাটাগরি পড়ুন!
ক্যাটাগরি-৩: পাস করা নিয়েই টানাটানি (ভবিষ্যৎ মাননীয় মন্ত্রী)
যাদের রেজাল্ট শিট দেখে বাবা দুই মিনিট স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন আর বন্ধুরা ফোন দিয়ে সহানুভূতির সুরে বলছিল, “বন্ধু, মন খারাপ করিস না,” তোমরাই হলে আসল নায়ক! তোমরাই গড়বে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ!
তোমাদের ভবিষ্যৎ: যখন টপাররা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মুখস্থ করতে ব্যস্ত ছিল, তোমরা তখন এলাকার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করে ‘ম্যানেজমেন্ট স্কিল’ ঝালিয়ে নিয়েছ। যখন অন্যরা রচনা মুখস্থ করছিল, তোমরা তখন চায়ের দোকানে জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ঝড় তুলে ‘পাবলিক স্পিকিং’-এ দক্ষ হয়েছ।
এর ফল? আজ থেকে ২০ বছর পর, কোনো এক শীতের সকালে তুমি পতাকা লাগানো গাড়িতে চড়ে একটি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে তোমার লেখা ভাষণ পড়বেন তোমার ব্যক্তিগত সচিব—এসএসসিতে ‘এ’ গ্রেড পাওয়া সেই বন্ধুটি! আর দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ হয়ে হাততালি দেবে জিপিএ-৫ পাওয়া সেই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা! ভাবা যায়?
শেষ কথা:
- জিপিএ-৫ পার্টি: বেশি উল্লসিত হয়ো না। সামনে কঠিন জীবন। পারলে এখন থেকেই মোটরসাইকেল চালানোটা শিখে রাখো, গ্রামের ভাঙা রাস্তায় কাজে দেবে!
- ফেল্টুস/লো-গ্রেড পার্টি: একদম মন খারাপ কোরো না। কান্না থামিয়ে ভালো একটি পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে রাখো আর এলাকার বড় ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াও। তোমার ভবিষ্যৎ রকেটের চেয়েও দ্রুতগতিতে উড়বে!
সবাইকে নিজ নিজ ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা!