আমরা সবাই একটি পরীক্ষার হলের যাত্রী, আর সেই পরীক্ষার নাম জীবন। ছবিটি ঠিক এই কথাটিই বলছে—”জীবন হলো সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা।” কিন্তু এই পরীক্ষায় বেশিরভাগ মানুষ ফেল করে, তার কারণ মেধা বা চেষ্টার অভাব নয়, বরং অন্যকে অন্ধভাবে নকল করার প্রবণতা।
সবচেয়ে বড় ভুলটা আমরা তখনই করি, যখন অন্যের উত্তরপত্রের দিকে তাকিয়ে নিজের খাতা ভরানোর চেষ্টা করি। আমরা ভুলে যাই, সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে একটি ভিন্ন প্রশ্নপত্র দিয়েছেন।
ব্যাপারটা একটু সহজভাবে ভাবা যাক:
স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় সবার প্রশ্নপত্র এক থাকে, তাই সেখানে ভালো ছাত্রছাত্রীকে অনুসরণ করা যায়। কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় আপনার প্রশ্ন আর আপনার বন্ধুর প্রশ্ন কখনোই এক হবে না। আপনার বেড়ে ওঠা, পরিস্থিতি, প্রতিভা, দুর্বলতা এবং স্বপ্ন—এ সবকিছু মিলিয়েই তৈরি হয়েছে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্নপত্র।
বাস্তব জীবনের কিছু উদাহরণ:
১. ক্যারিয়ারের দৌড়: আপনার বন্ধু হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে খুব ভালো বেতনে চাকরি করছে। তাকে দেখে আপনিও হয়তো ভাবছেন, “আমাকে ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে, এটাই সফলতার পথ।” কিন্তু আপনার প্রশ্নপত্রে হয়তো লেখা ছিল ‘সৃজনশীলতা’ বা ‘শিল্পকলার’ কথা। আপনার হয়তো ভালো লাগে লিখতে, আঁকতে বা মানুষের সাথে মিশে কাজ করতে। অন্যের উত্তর দেখে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে আপনি হয়তো মাঝপথে হাঁপিয়ে উঠবেন, কারণ ওই প্রশ্নগুলো আপনার জন্য ছিলই না। ফলাফল—হতাশা আর ব্যর্থতা।
২. সোশ্যাল মিডিয়ার মরীচিকা: ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে বন্ধুকে দামি রেস্তোরাঁয় খেতে দেখে বা বিদেশে ঘুরতে দেখে আমাদের মনে হয়, “আমার জীবনটা ব্যর্থ।” আমরা ভুলে যাই যে, তার প্রশ্নপত্রে হয়তো ‘আর্থিক সচ্ছলতা’ বা ‘ভ্রমণ’ সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো সহজ ছিল। আপনার প্রশ্নপত্রে হয়তো ‘পারিবারিক সুখ’, ‘মানসিক শান্তি’ বা ‘ছোট ছোট বিষয়ে আনন্দ খুঁজে নেওয়া’র মতো ভিন্ন কিছু প্রশ্ন রয়েছে। অন্যের চকচকে উত্তরপত্র দেখে নিজের бесцен্য প্রশ্নগুলোকে অবহেলা করা কি বোকামি নয়?
৩. সম্পর্ক ও জীবনযাপন: কেউ হয়তো ২৫ বছর বয়সেই বিয়ে করে সংসার শুরু করেছে। তাকে দেখে আপনি যদি ভাবেন, “আমারও দ্রুত বিয়ে করা উচিত,” তাহলে আপনি আবার অন্যের উত্তর নকল করছেন। আপনার প্রশ্নপত্রে হয়তো ‘ক্যারিয়ার গোছানো’ বা ‘ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে তৈরি করা’র প্রশ্নগুলো আগে এসেছে। সঠিক সময়ে নিজের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অন্যের দেখাদেখি অন্য প্রশ্নে চলে গেলে জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক।
তাহলে করণীয় কী?
- নিজের প্রশ্নপত্রটি পড়ুন: অন্যকে দেখার আগে নিজেকে সময় দিন। আপনার কী ভালো লাগে? আপনি কীসে দক্ষ? আপনার স্বপ্নটা কী? এটাই আপনার প্রশ্নপত্র বোঝা।
- সাফল্যের নিজস্ব সংজ্ঞা তৈরি করুন: অন্যের কাছে যেটা সফলতা, আপনার কাছেও সেটাই হতে হবে—এমন কোনো কথা নেই। মোটা বেতনের চাকরি নয়, হয়তো একটি ছোট কিন্তু নিজের গড়া ব্যবসাই আপনার জন্য আসল সাফল্য। আপনার সাফল্যের সংজ্ঞা আপনিই লিখুন।
- নকল নয়, অনুপ্রেরণা নিন: অন্যের ভালো কিছু দেখলে তাকে হিংসা বা অন্ধভাবে নকল না করে অনুপ্রেরণা নিন। তার সফলতার পেছনের পরিশ্রম ও কৌশল থেকে শিখুন, কিন্তু প্রয়োগ করুন নিজের প্রশ্নপত্রের ওপর।
- নিজের গতিতে চলুন: জীবনের দৌড়ে সবাই যার যার লেনে দৌড়ায়। কেউ দ্রুত দৌড়াবে, কেউ ধীরে। المهم হলো, দৌড়টা শেষ করা। আপনার গতি আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করুন।
শেষ কথা:
আপনার জীবনের পরীক্ষার খাতাটি একান্তই আপনার। এখানে কোনো প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়ার প্রতিযোগিতা নেই। আপনার задача হলো নিজের প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সুন্দর উত্তর দিয়ে খাতাটি ভরে তোলা। অন্যের উত্তরপত্র দেখে নিজের শুদ্ধ উত্তরটি কেটে দেবেন না। কারণ দিন শেষে বিচারক আপনার খাতাটিই দেখবেন, অন্যেরটা নয়।