Breaking News

মৃত্যুর পর ভাই-বোনের আর দেখা হবে না: একটি ভুল ধারণা

আমাদের সমাজে এমন অনেক কথা প্রচলিত আছে, যার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। ‘মৃত্যুর পর ভাই-বোনের আর দেখা হবে না’—এমন একটি ভুল ধারণা সমাজে বেশ দৃঢ়ভাবে প্রচলিত আছে, যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এই ধরনের কথাবার্তা শুনে অনেকে বিভ্রান্ত হন এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হন। অথচ কুরআন ও হাদিসের আলোকে এই কথাটির কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেই প্রযোজ্য।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ

ইসলামী পণ্ডিতদের মতে, মৃত্যুর পর ভাই-বোনের দেখা হবে না—এমন কোনো কথা পবিত্র কুরআন বা সহীহ হাদিসে নেই। এই ধারণাটি মানুষের মনগড়া এবং ভুল ব্যাখ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “মৃত্যুর পর ভাই-বোনের আর দেখা হবে না এমন কোনো কথা কোরআন-সুন্নাহর কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই। এটা একান্ত কারো মনগড়া বাক্য।”

এই ভুল ধারণার পেছনে একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতার বর্ণনাকে ভুলভাবে বোঝা। পবিত্র কুরআনের সূরা আবাসা’র ৩৪ থেকে ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

“সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার মা, তার বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুতর অবস্থা থাকবে, যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত করে রাখবে।”

এই আয়াতটিতে কিয়ামতের দিনের চরম সংকটময় পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে, যখন প্রত্যেকেই নিজের হিসাব নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকবে যে অন্য কারও দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। এটি কখনোই এই অর্থে বলা হয়নি যে মৃত্যুর পর ভাই-বোনের সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। বরং এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে মৃত্যুর পরেও ভাই-বোনের সম্পর্ক টিকে থাকে, নইলে কিয়ামতের দিন তারা একে অপরের কাছ থেকে পালাবে কেন? এই আয়াতটি বরং তাদের সম্পর্কের গভীরতাকে ইঙ্গিত দেয়, যা সেই ভয়াবহ দিনেও তাদের মনে থাকবে।


জান্নাতে পুনর্মিলন ও আত্মীয়তার মর্যাদা

যদি কোনো ভাই ও বোন উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করে, তাহলে তাদের পুনর্মিলন নিশ্চিত। ইসলামে বলা হয়েছে, জান্নাতবাসীরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হবেন। জান্নাতে মুমিনরা যা চাইবে, তা-ই পাবে। তাই সেখানে তারা তাদের ভাই-বোন বা অন্য কোনো আত্মীয়কে খুঁজে পেতে চাইবে এবং আল্লাহ তা’আলা তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ করবেন।

এছাড়া, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

এই হাদিসটি থেকে আমরা বুঝতে পারি, আত্মীয়তার সম্পর্ক শুধু দুনিয়ার জন্য নয়, বরং পরকালের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্ক ছিন্ন করা এমন একটি বড় পাপ, যা জান্নাতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিতে পারে। এই হাদিসটি পরকালেও আত্মীয়দের একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকার ইঙ্গিত দেয়।


বাস্তব উদাহরণ ও উপসংহার

আমরা দেখতে পাই, সমাজে এই ধরনের ভুল ধারণাগুলো প্রচলিত আছে, যেমন— ভাই-বোনের কথা বলার সময় ফেরেশতারা সময় থামিয়ে দেন। এই ধরনের কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং এ থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। ইসলাম সবসময় মানুষকে সঠিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিকে আহ্বান করে।

<

p style=”text-align: justify;”>সুতরাং, মৃত্যুর পর ভাই-বোনের আর দেখা হবে না—এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ইসলামের শিক্ষা বিরোধী। যদি উভয়ই আল্লাহ তা’আলার রহমতে জান্নাতে যেতে পারেন, তবে তারা অবশ্যই সেখানে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবেন। আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদের সবাইকে এই ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করেন এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করেন।

About The Author

About Admin

Check Also

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা: একটি অগ্রযাত্রার ইতিবৃত্ত

ভূমিকা: ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বপ্নের সূচনা ঔপনিবেশিক আমলে যে আধুনিক শিক্ষার বৃক্ষ রোপিত হয়েছিল, তার শিকড় …

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Skip to toolbar