খোলা বই ডেস্ক | ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সম্প্রতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ও সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
গত ৩০ ও ৩১ আগস্টের উত্তপ্ত পরিস্থিতির পর আজ (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সভাপতিত্বে ৫৬৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে রাত সোয়া আটটায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সিন্ডিকেট সচিব প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:


আহত শিক্ষার্থীদের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়
✓ সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আহত সকল শিক্ষার্থীর প্রতি জানানো হয়েছে গভীর সমবেদনা।
✓চিকিৎসার দায়িত্ব: হামলায় আহত সকল শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এ লক্ষ্যে আহত শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
✓পুলিশি নিরাপত্তা: শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ মডেল থানা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলগেট এলাকায় একটি নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের জন্য দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
✓শাটল ট্রেনের নিরাপত্তা: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ শাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
✓সেনাবাহিনীর টহল: পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্ট্রাইকিং ফোর্স (সেনাবাহিনী) মোতায়েন রাখা এবং তাদের টহল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে।
আবাসন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন
✓পূর্ণাঙ্গ আবাসিক করার উদ্যোগ: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১০ তলা বিশিষ্ট ৫টি ছাত্র হল এবং ৫টি ছাত্রী হল নির্মাণের জন্য দ্রুত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রস্তুত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।
✓হল সংস্কার: বিদ্যমান আবাসিক হলগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযোগী করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
✓কটেজ ও ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেসব কটেজ বা বাসায় ভাড়া থাকেন, তাদের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘরভাড়া সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
✓মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে ২টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হবে। পাশাপাশি এটিকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে সরকারের নিকট দাখিল করা হবে।
তদন্ত ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ
✓বিচার বিভাগীয় তদন্তের অনুরোধ: ৩০ ও ৩১ আগস্টের পুরো ঘটনা, এর পেছনের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
✓বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্ত কমিটি: পাশাপাশি, ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ সদস্যের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী।
সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ
✓আলোচনা ও মতবিনিময়: বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের স্বার্থে সকল স্টেকহোল্ডারদের (শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয় প্রতিনিধি) সাথে পর্যায়ক্রমে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
✓স্থানীয়দের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে পদক্ষেপ: উদ্ভূত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিরীহ স্থানীয়দের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তা পূরণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করছে, গৃহীত এই সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত হবে।