২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, শেষ মুহূর্তের সাফল্যের গল্পটা লিখবে তোমরা!

প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুরা,
আর মাত্র ক’টা দিন! তোমাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি আর স্বপ্নের পালে বাতাস লেগেছে। এই দিনগুলো তোমাদের জীবনের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। অনেকটা ক্রিকেট ম্যাচের শেষ ওভারের মতো, যেখানে প্রতিটা বল বুঝে খেলা আর পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাওয়াই এনে দেয় জয়। আমি ক্যাপ্টেন মুহম্মদ জিয়াউর রহমান, তোমাদের হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে শুধু বইয়ের হিসাব নয়, জীবনের হিসাবটাও সহজ করে বোঝাতে চাই। ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার রুটিনটা নিশ্চয়ই হাতে চলে এসেছে? চলো, সেই রুটিনের নির্দেশনাগুলোকেই আমরা নিজেদের সাফল্যের গল্প লেখার চাবিকাঠি বানাই।

১. গল্প ১: বর্ষার দিনে পরীক্ষার হলে পৌঁছানো – ‘আগে ভাগে থাকার গল্প’
মনে আছে গত বছরের কথা? কিংবা এই তো দু’মাস আগের ঘটনা? হঠাৎ করে নেমে আসা মুষলধারে বৃষ্টি, আর নিমেষেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়া। চট্টগ্রামের বর্ষা তো এমনটাই। গত বছর আমার এক ছাত্র, নাম আসিফ, তার পরীক্ষা ছিল সকাল ১০টায়। বাসা থেকে সে ৮টায় বের হলো, ভেবেছিল অনেক সময় আছে। কিন্তু সেদিন সকাল থেকেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। তার বাড়ির সামনের রাস্তায় জল জমে গেল কোমর পর্যন্ত। রিকশাও পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত কী হলো জানো? সে কোনোরকমে একটা ভ্যানে করে প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছালো ৯টা ৫৫ মিনিটে! হাঁপাতে হাঁপাতে হলে ঢুকে কোনোমতে বসতে পারলেও, ততক্ষণে তার মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠেছিল।

এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখি? বর্ষার দিনগুলিতে ‘সময়’টা আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু, আবার শত্রুও হতে পারে। রুটিনে স্পষ্ট লেখা আছে, “পরীক্ষা শুরুর ৩০ (ত্রিশ) মিনিট পূর্বে অবশ্যই পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে।” ধরো, তোমার পরীক্ষা সকাল ১০টায়। এর মানে, তোমাকে কমপক্ষে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে তোমার আসনে বসে থাকতে হবে। আর বর্ষাকালে? আরও আগে বের হতে হবে! যদি তোমার বাসা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র যেতে ৩০ মিনিট লাগে, তাহলে বর্ষার দিনে তুমি এক ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হও। ১০টার পরীক্ষা হলে ৯টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ো। ৯:৩০ এর মধ্যে হলে পৌঁছে যাও।

টিপস:
✓বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে আগের রাতেই ছাতা বা রেইনকোট গুছিয়ে রাখো।
✓একটির বদলে দুটি রাস্তা মাথায় রাখো। যদি মূল রাস্তা বন্ধ থাকে, কোন পথে বিকল্পভাবে যাওয়া যায়?
✓গণপরিবহনে ভিড় বেশি হতে পারে, তাই একটু হেঁটে বা রিকশার জন্য বেশি সময় বরাদ্দ রাখো।
✓মনে রাখবে, সময়মতো হলে পৌঁছানো মানেই অর্ধেক চাপ মুক্ত হয়ে যাওয়া।

২. গল্প ২: হলে ঢুকে ‘নিজের রাজ্য’ খুঁজে নেওয়া – ‘স্থির থাকার গল্প’

তুমি পরীক্ষা হলে পৌঁছে গেছো। ঢুকতেই দেখছো, অনেক ছাত্রছাত্রী দাঁড়িয়ে আছে, কেউ রোল খুঁজছে, কেউ সিট নম্বর মেলাচ্ছে। এই মুহূর্তে একদম ঘাবড়ে যাবে না। রুটিনে আছে, “প্রবেশপত্র প্রদর্শনপূর্বক নিজ আসনে বসতে হবে।

আমার এক সহকর্মী প্রায়ই বলেন, “পরীক্ষা হলে নিজের আসনটা হলো পরীক্ষার্থীর নিজস্ব রাজ্য।” শান্তভাবে তোমার প্রবেশপত্র বের করো। রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর আর কক্ষ নম্বরটা মিলিয়ে নাও। ধীরে সুস্থে তোমার নির্ধারিত আসনে যাও এবং বসো। এরপর তোমার কলম, পেন্সিল, স্কেল, রাবার, প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড – সবকিছু টেবিলের ওপর গুছিয়ে রাখো। এই ছোট কাজগুলো তোমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তুলবে। মনে রাখবে, “ওএমআর শিট এবং উত্তরপত্র বিতরণের পর প্রশ্নপত্র বিতরণের পূর্ব পর্যন্ত (১ম ও ২য় শিফটের ক্ষেত্রে যথাক্রমে সকাল ১০:২৫ মিনিট ও দুপুর ২:২৫ মিনিট) প্রশ্নপত্র সম্পর্কে কোন কথা বলা যাবে না।” এই সময়টা তুমি মন স্থির করার জন্য ব্যবহার করো।

টিপস:

  • আসন খুঁজে পেয়েই তাড়াহুড়ো না করে, গভীরভাবে একটা শ্বাস নাও আর ছাড়ো।
  • কোনো অস্থিরতা থাকলে চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড মন শান্ত করার চেষ্টা করো।
  • চারপাশের দিকে না তাকিয়ে নিজের পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা ভাবো।

৩. গল্প ৩: হল পরিদর্শক – ‘সম্মান আর বন্ধুত্বের গল্প’

পরীক্ষার হলে যিনি থাকেন, তিনি আমাদের পরীক্ষার পরিদর্শক। অনেকে ভাবেন, উনি বুঝি আমাদের দিকে কড়া নজর রাখার জন্য আছেন। আসলে ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। পরিদর্শকগণ তোমাদের পরীক্ষাটা সুশৃঙ্খলভাবে হোক, সেটাই নিশ্চিত করেন। আমার কলেজের একজন পরিদর্শক স্যার আছেন, যিনি সবসময় হাসি মুখে থাকেন। একবার এক ছাত্রের কলমের কালি শেষ হয়ে গিয়েছিল, স্যার তাকে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে খুব সুন্দর ব্যবহার করেন।
রুটিনে লেখা আছে, “প্রবেশপত্র ছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরিদর্শকের অনুমতি ব্যতীত ওয়াশ রুমে যাওয়া যাবে না।” পরিদর্শকের সাথে তোমার ব্যবহার কেমন হবে, তা কিন্তু তোমার মানসিকতার পরিচয় দেবে। কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করার হলে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করো। অযথা উচ্চস্বরে কথা বলবে না বা অন্যদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে না। তারা তোমার সহায়ক, শত্রু নন।

টিপস:

  • কোনো দরকার হলে হাত তুলে পরিদর্শককে দৃষ্টি আকর্ষণ করো।
  • অযথা কথা বলে বা অন্যের সাথে যোগাযোগ করে পরিদর্শককে বিরক্ত করবে না।
  • তারা যে নিয়মকানুন বলেন, তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং মেনে চলবে।

৪. গল্প ৪: ঘড়ি ধরে খেলা – ‘সময় ব্যবস্থাপনার গল্প’

আমরা যখন হিসাববিজ্ঞানের অংক করি, তখন একটা নির্দিষ্ট ফরমেট অনুসরণ করি, ঠিক তেমনি পরীক্ষার সময়ও একটা কৌশল থাকা চাই। রুটিনের বিশেষ নির্দেশনার ২ নম্বরেই বলা আছে, “সৃজনশীল (CQ) অংশ ও বহুনির্বাচনী (MCQ) উভয় অংশে আলাদাভাবে পাস করতে হবে।” এই কথাটা শুধু মনে রাখলে হবে না, একে কাজে লাগাতে হবে। আর ৬ নম্বর নির্দেশনাটি তো তোমার হাতে সময়কে জয় করার বীজমন্ত্র তুলে দিচ্ছে: “বহুনির্বাচনী (MCQ) পরীক্ষায় উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সম্বলিত বিষয়ের পরীক্ষার ক্ষেত্রে ২৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য ২৫ মিনিট এবং ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়ের পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৩০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে।” এটা তোমাকে পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছে, তোমার ঘড়িই হবে তোমার সেরা বন্ধু, আর তোমাকে সেই বন্ধুর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

কল্পনা করো, তুমি একটা ঘড়ির কাটার সাথে দৌড়াচ্ছো। পরীক্ষা শুরু হলো, প্রথমে আসবে এমসিকিউ অংশ।

এমসিকিউ (MCQ) অংশের কৌশল:

  • ব্যবহারিক সম্বলিত বিষয় (যেমন বিজ্ঞান বিভাগ): এখানে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য তুমি পাচ্ছো ঠিক ১ মিনিট। অর্থাৎ ২৫টি প্রশ্নের জন্য ২৫ মিনিট। তোমার লক্ষ্য থাকবে, এই ২৫ মিনিটে যতটা সম্ভব নির্ভুল উত্তর দেওয়া।
  • ব্যবহারিকবিহীন বিষয় (যেমন মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ): তোমাদের হাতে আছে ৩০টি প্রশ্নের জন্য ৩০ মিনিট, অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ঠিক ১ মিনিট।
  • প্রতিটি প্রশ্নের জন্য এই নির্ধারিত সময়সীমা মনে রেখে উত্তর দিন। যে প্রশ্নগুলো তুমি শতভাগ নিশ্চিত, সেগুলো আগে উত্তর দিয়ে ফেলো। এতে সময় বাঁচবে। এরপর বাকি প্রশ্নগুলোর জন্য সময় রাখো। অযথা এক প্রশ্নে বেশি সময় ব্যয় করলে অন্য প্রশ্নগুলো দেখার সুযোগ নাও পেতে পারো। মনে রাখবে, ‘MCQ এর উত্তর দেওয়ার জন্য কালো কালির বলপেন দ্বারা সঠিক বৃত্ত ভরাট করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাটাকাটি বা ঘষামাজা করা যাবে না।

এমসিকিউ শেষ হওয়ার পর শুরু হবে সৃজনশীল অংশের যুদ্ধ। এখানেই আসে আসল সময় ব্যবস্থাপনার খেলা। আমার এক সাবেক ছাত্র ছিল, নাম সীমান্ত। সে বিজ্ঞানের ছাত্র। পরীক্ষার আগে আমরা তাকে শুধু পড়তেই বলতাম না, প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কতটুকু সময় দেবে, সেই সময়কে কীভাবে ভাগ করে নেবে – তা অনুশীলন করতে বলতাম। সীমান্ত ঠিক সেভাবেই প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নকে ধাপে ধাপে ভাগ করে নিত। এতে তার লেখা যেমন গোছানো হতো, তেমনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও সম্ভব হতো। সে কখনো কোনো প্রশ্ন অসম্পূর্ণ রেখে আসত না, কারণ সে জানত, সময়কে কীভাবে বশে আনতে হয়। এমসিকিউ শেষ হওয়ার পর শুরু হবে সৃজনশীল অংশের যুদ্ধ। এখানেই আসে আসল সময় ব্যবস্থাপনার খেলা। আমার এক সাবেক ছাত্র ছিল, নাম সীমান্ত। সে বিজ্ঞানের ছাত্র। পরীক্ষার আগে আমরা তাকে শুধু পড়তেই বলতাম না, প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কতটুকু সময় দেবে, সেই সময়কে কীভাবে ভাগ করে নেবে – তা অনুশীলন করতে বলতাম। সীমান্ত ঠিক সেভাবেই প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নকে ধাপে ধাপে ভাগ করে নিত। এতে তার লেখা যেমন গোছানো হতো, তেমনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও সম্ভব হতো। সে কখনো কোনো প্রশ্ন অসম্পূর্ণ রেখে আসত না, কারণ সে জানত, সময়কে কীভাবে বশে আনতে হয়।

বিভাগভিত্তিক সৃজনশীল (CQ) অংশের কৌশল: ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মেলাও!

সৃজনশীল অংশে এসে তোমার ঘড়ি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য আমরা কিছু নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করতে পারি, যা তোমার বিভাগ অনুযায়ী ভিন্ন হবে।

বিজ্ঞান বিভাগ:
সম্পূর্ণ প্রশ্নপত্রটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ও উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন নির্বাচন (১০-১২ মিনিট):

এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শান্ত মনে প্রশ্নগুলো পড়ুন। যে প্রশ্নগুলো সবচেয়ে ভালো পারেন এবং যেগুলোর উত্তর গুছিয়ে লিখতে পারবেন, সেগুলো চিহ্নিত করুন। মনে রাখবেন, কিছু প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ থাকে, সেগুলো দিয়ে শুরু করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং লেখার গতিও আসবে।

প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লিখুন (২৮-৩১ মিনিট): এই ২৮-৩১ মিনিটকে আবার ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন, যা আপনাকে আরও সুসংগঠিত করবে:

  • প্ল্যানিং ও ড্রাফট(৪-৫ মিনিট): এই সময়ে দ্রুত চিন্তা করে নিন উত্তর কী লিখবেন, কোন পয়েন্টগুলো দেবেন, উদাহরণ কী থাকবে। চাইলে প্রশ্নপত্রের ফাঁকা জায়গায় ছোট করে একটা রূপরেখা বা পয়েন্টগুলো লিখে নিতে পারেন।
  • লিখুন(২২-২৪ মিনিট): এই সময়ে আপনার লেখা শুরু করুন এবং দ্রুততার সাথে পরিষ্কার হাতে শেষ করুন। লেখার গতি বজায় রাখা জরুরি।
  • প্রুফরিড(২-৩ মিনিট): লেখা শেষ হওয়ার পর দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে নিন। বানান ভুল, বাক্য গঠন, তথ্যের কোনো ভুল আছে কিনা বা কোনো পয়েন্ট বাদ পড়ল কিনা – দ্রুত দেখে সংশোধন করে নিন।

মানবিক/ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ:
✓সম্পূর্ণ প্রশ্নপত্রটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ও উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন নির্বাচন (৮-১০ মিনিট):

বিজ্ঞানের মতোই, প্রথমে প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়ুন। যে প্রশ্নগুলো আপনার সবচেয়ে পরিচিত এবং যেগুলোর উত্তর ভালোভাবে দিতে পারবেন, সেগুলো বেছে নিন।

✓প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লিখুন (১৮-২১ মিনিট): এই ১৮-২১ মিনিটকেও দক্ষতার সাথে ভাগ করে নিন:

  • প্ল্যানিং ও ড্রাফট(২-৩ মিনিট): উত্তর লেখার আগে কী লিখবেন, কোন তথ্যগুলো দেবেন, তার একটা ছোট পরিকল্পনা মনে মনে তৈরি করে নিন।
  • লিখুন(১৪-১৬ মিনিট): এই সময়ে দ্রুত এবং পরিষ্কার হাতে আপনার উত্তর লিখুন। লেখার গুণগত মান ঠিক রেখে গতি বজায় রাখুন।
  • প্রুফরিড(২-৩ মিনিট ): লেখা শেষ করে দ্রুত একবার দেখে নিন। কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণতা থাকলে ঠিক করে নিন।

সৃজনশীল অংশে এসে তোমার ঘড়ি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ধরো, প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য তুমি এই নির্দিষ্ট সময়টুকু বরাদ্দ রাখলে। একটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে যদি দেখো, তোমার সময় বেশি লেগে যাচ্ছে, তাহলে দ্রুত শেষ করে পরের প্রশ্নে যাও। পরে সময় থাকলে ফিরে এসে যোগ করতে পারবে। অনেকেই একটি প্রশ্ন সুন্দর করতে গিয়ে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর ঠিকমতো লিখতে পারে না। এতে তোমার মার্কস কমে যেতে পারে। তাই, “সময়কে ভাগ করো, সময় তোমাকে জয় এনে দেবে।

টিপস:

  • একটি সহজ ঘড়ি (স্মার্টওয়াচ নয়, কারণ স্মার্টওয়াচ অনেক কেন্দ্রে নিষিদ্ধ হতে পারে) নিয়ে যাও যা তুমি টেবিলে রাখতে পারবে এবং যা দেখে সহজে সময় বুঝতে পারবে।
  • প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর দ্রুত চোখ বুলিয়ে নাও এবং কোন প্রশ্নগুলো আগে উত্তর দেবে, তা মনে মনে ঠিক করে নাও।
  • প্রথমে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর সবচেয়ে ভালো জানো, সেগুলো লেখো। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং দ্রুততার সাথে এগোতে পারবে।
  • কোনো প্রশ্নে আটকে গেলে অযথা সময় নষ্ট না করে পরের প্রশ্নে চলে যাও। পরে সময় পেলে ফিরে এসে চেষ্টা করবে।

৫. গল্প ৫: পরীক্ষা হলের নিয়মকানুন – ‘যোদ্ধার অনুশাসনের গল্প’

একজন ভালো সৈনিক যেমন যুদ্ধের মাঠে তার অনুশাসনগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, তেমনি একজন ভালো পরীক্ষার্থীও পরীক্ষা হলের নিয়মগুলো মেনে চলে। রুটিনের বিশেষ নির্দেশনার প্রতিটি লাইন মনোযোগ দিয়ে পড়ো।

  • “পরীক্ষা হলে ক্যালকুলেটর (নন প্রোগ্রামেবল) ব্যবহার করা যাবে।” – তোমার হিসাববিজ্ঞানের অংকের জন্য এটা আশীর্বাদ। সঠিক ক্যালকুলেটরটি নিয়ে যেতে ভুলো না।
  • “পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না।” – এটা একদম লাল কালিতে লিখে রাখো। মোবাইল ফোন তো দূরের কথা, স্মার্টওয়াচও পরিহার করবে। কারণ, এর কারণে তোমার পরীক্ষা বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
  • “পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরিদর্শকের অনুমতি ব্যতীত ওয়াশ রুমে যাওয়া যাবে না।” – এটা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার দেখা অনেক ভালো ছাত্র-ছাত্রীও পরীক্ষার মাঝে ওয়াশরুমে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করে। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়াটা মানুষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু পরীক্ষার আগে বা পরে সেটা করে নিতে পারো। পরীক্ষার মাঝখানে ১০-১৫ মিনিট নষ্ট হওয়া মানে তোমার একটা পুরো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়া। তাই, পরীক্ষার আগে অবশ্যই এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যাবে।

৬. গল্প ৬: শেষ মুহূর্তের জাদু – ‘রিভিশনের গল্প’

তুমি যখন সব উত্তর লিখে ফেলেছ, ঘড়ি দেখছো, হাতে আরও ১০ মিনিট সময় আছে। এই ১০ মিনিটটা কিন্তু তোমার জন্য একটা ‘ম্যাজিক টাইম‘। আমার এক ছাত্র আছে, নাম রাফি। সে সবসময় উত্তর লেখার পর শেষ ১০ মিনিট শুধু রিভিশন দিত। একবার এক গণিত পরীক্ষায় সে একটা যোগ ভুল করেছিল, রিভিশন দিতে গিয়ে সেটা ধরে ফেলেছিল।

শেষের এই সময়টুকু শুধু রিভিশনের জন্য রাখো। বানান ভুল, বাক্য ভুল, অংকে যোগ-বিয়োগের ভুল বা কোনো প্রশ্নের অংশ বাদ পড়ে গেল কিনা, দ্রুত চোখ বুলিয়ে নাও। মনে রেখো, “নির্ধারিত সময়ের আগেই সব প্রশ্নের উত্তর লেখার কৌশল বাতলে দেয়া” মানে শুধু লেখা শেষ করা নয়, নির্ভুলভাবে লেখা শেষ করা।


উপসংহার: ‘তোমার সাফল্যের গল্প’

প্রিয় বন্ধুরা, এইচএসসি পরীক্ষা শুধু কিছু লিখিত পরীক্ষার নাম নয়। এটা তোমাদের ধৈর্য, পরিশ্রম আর বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের পরীক্ষা। শেষ মুহূর্তের এই প্রস্তুতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে শান্ত থাকো। পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার আর মানসিক প্রস্তুতি তোমাকে এই যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করবে। মনে রাখবে, রুটিনের প্রতিটি নির্দেশনা তোমার ভালোর জন্যই দেওয়া হয়েছে।

নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তুমিই তোমার সাফল্যের গল্পটা লিখবে। শুভকামনা তোমাদের সবার জন্য!

 

About The Author

About Admin

Check Also

মৃত্যুর পর ভাই-বোনের আর দেখা হবে না: একটি ভুল ধারণা

আমাদের সমাজে এমন অনেক কথা প্রচলিত আছে, যার কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। ‘মৃত্যুর পর ভাই-বোনের …

Leave a Reply

error: Content is protected !!
Skip to toolbar