English Quotation:
“The task of the excellent teacher is to stimulate ‘apparently ordinary’ people to unusual effort. The tough problem is not in identifying winners; it is in making winners out of ordinary people.” – K. Patricia1 Cross
বাংলা অনুবাদ:
“উৎকৃষ্ট শিক্ষকের কাজ হলো ‘আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ’ মানুষদেরকে অসাধারণ প্রচেষ্টায় উদ্দীপিত করা। আসল কঠিন কাজ বিজয়ীদের খুঁজে বের করা নয়, বরং সাধারণ মানুষদেরকেই বিজয়ী হিসেবে গড়ে তোলা।” – কে. প্যাট্রিসিয়া ক্রস
ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ:
এই উক্তিটি শিক্ষকের ভূমিকার এক গভীর সত্যকে উন্মোচিত করে। একজন সেরা শিক্ষকের সার্থকতা কেবল ক্লাসের প্রথম সারির শিক্ষার্থীদের নিয়ে নয়, বরং সেইসব শিক্ষার্থীদের মাঝে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলার মধ্যে, যারা নিজেদের সাধারণ মনে করে গুটিয়ে রাখে। বিজয়ীকে খুঁজে বের করার চেয়েও কঠিন এবং মহৎ কাজ হলো সাধারণের মধ্য থেকে বিজয়ী তৈরি করা, যা কেবল একজন দূরদর্শী শিক্ষকই পারেন।
শিক্ষক: নাসরিন সুলতানা (কাল্পনিক নাম)
চট্টগ্রামের একটি স্কুলের ইতিহাস শিক্ষিকা। তাঁর কাছে ইতিহাস শুধু রাজা-বাদশাহ বা যুদ্ধের সাল-তারিখ মুখস্থ করার বিষয় ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন, ইতিহাস হলো সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প, যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিজের জীবনের সাথে সম্পর্কিত।
শিক্ষার্থী: ইমরান হোসেন (কাল্পনিক নাম)
ইমরান ক্লাসের সেই শান্তশিষ্ট, লাজুক ছেলেটি, যাকে খুব সহজে কারো চোখে পড়ে না। সে পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো হলেও সবার সামনে কথা বলতে বা নিজেকে প্রকাশ করতে খুব ভয় পেত। সে নিজেকে ক্লাসের আর দশজন সাধারণ ছাত্রের মতোই ভাবত।
অনুপ্রেরণার গল্প:
নাসরিন ম্যাডাম ক্লাসে বাংলাদেশের স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে একটি প্রজেক্ট দিলেন। নিয়ম ছিল, প্রত্যেককে নিজ পরিবার বা এলাকার এমন কোনো সাধারণ মানুষের গল্প তুলে ধরতে হবে, যিনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নীরবে বড় ভূমিকা রেখেছেন কিন্তু যাঁর কথা কেউ জানে না। এই প্রজেক্টের কথা শুনেই ইমরানের মন খারাপ হয়ে গেল। তার মনে হলো, তার পরিবারে বা এলাকায় এমন “বিশেষ” কেউ নেই।
সে সংকোচের সাথে ম্যাডামকে গিয়ে বলল, “ম্যাডাম, আমার দাদা তো একজন সাধারণ পোস্টম্যান ছিলেন। তাকে নিয়ে লেখার মতো তো কিছু নেই।”
নাসরিন ম্যাডাম স্মিত হেসে উত্তর দিলেন, “একজন পোস্টম্যান? তাও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে? এর চেয়ে অসাধারণ গল্প আর কী হতে পারে, ইমরান?” তিনি ইমরানকে কিছু প্রশ্ন করতে বললেন, “তুমি কি জানো, সেই ভয়ঙ্কর সময়ে তোমার দাদা কীভাবে মানুষের কাছে চিঠি পৌঁছে দিতেন? তিনি কি শুধু চিঠি বিলি করতেন, নাকি স্বজনদের খোঁজখবর দিয়ে পরিবারগুলোকে আশার আলো দেখাতেন? তিনি তো ছিলেন সেই সময়ের জীবন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা।”
ম্যাডামের কথায় ইমরান প্রথমবার নিজের দাদাকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখল। সে বাসায় গিয়ে তার দাদি এবং বাবার সাথে কথা বলে জানতে পারল এক অবিশ্বাস্য ইতিহাস। তার দাদা শুধু একজন পোস্টম্যান ছিলেন না, তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন খবরের বাহক এবং গ্রামের একমাত্র ভরসা, যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে মানুষের হাতে তাদের প্রিয়জনের চিঠি পৌঁছে দিতেন।
ইমরান তার দাদাকে নিয়ে একটি হৃদয়স্পর্শী প্রতিবেদন তৈরি করল। ক্লাসে যখন সে সেই গল্প উপস্থাপন করল, তার কণ্ঠস্বরে ভয় বা লজ্জা ছিল না, ছিল গর্ব আর আত্মবিশ্বাস। সেই প্রজেক্টটি স্কুলের সেরা কাজ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিল।
ইতিবাচক বার্তা:
এই কাহিনি আমাদের দেখায়, একজন শিক্ষকের একটি সঠিক প্রশ্ন বা একটুখানি উৎসাহ কীভাবে একজন শিক্ষার্থীর নিজেকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। নাসরিন ম্যাডাম ইমরানের মধ্যে কোনো বিজয়ীকে খুঁজে বের করেননি, বরং ইমরানের সাধারণ গল্পের মাঝেই লুকিয়ে থাকা বীরত্বকে চিনিয়ে দিয়ে তাকেই একজন বিজয়ী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এই শিক্ষকেরাই আমাদের সমাজের আসল নায়ক, যাঁরা সাধারণের ভেতর থেকে অসাধারণকে বের করে আনেন।
আপনার জীবনেরও কি এমন কোনো শিক্ষক আছেন, যিনি আপনার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভাকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছিলেন? তাঁর গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করুন। ‘খোলাবই’-তে আমরা সেই নীরব কারিগরদের কথা তুলে ধরতে চাই।