আসসালামু আলাইকুম!
আশা করি সবাই ভালো আছেন।
আমি মুহম্মদ জিয়াউর রহমান। আমি বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি এবং পাশাপাশি একজন আয়কর পেশাজীবী (ITP) হিসেবে অত্যন্ত স্বল্প খরচে করদাতাদের অনলাইনে নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিলে সহায়তা করে আসছি।
আমার প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও লাভজনক বিনিয়োগ হলো “ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড” (WEDB)। তবে, এই বন্ডের মুনাফা এবং মূলধন সম্পূর্ণ করমুক্ত হওয়ায় অনেকেই আয়কর রিটার্নে এটি কীভাবে প্রদর্শন করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগেন।
- করমুক্ত হলেও এটা কি রিটার্নে দেখানো বাধ্যতামূলক?
- মুনাফা কোথায় দেখাবো?
- মূল বিনিয়োগ কোথায় দেখাবো?
- নতুন বন্ড কিনলে টাকার উৎস কী দেখাবো?
- ই-রিটার্ন পোর্টালে কোন ঘরে কী লিখবো?
আপনাদের এই সকল প্রশ্নের জবাবে, আমি আজ একটি সম্পূর্ণ, তথ্যবহুল ও নির্ভরযোগ্য প্রবন্ধ শেয়ার করছি। এই গাইডটি সাধারণ করদাতা থেকে শুরু করে আমার সহকর্মী অভিজ্ঞ আয়কর আইনজীবীদেরও (ITP) রেফারেন্স হিসেবে কাজে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
এখানে ২০২৫-২০২৬ কর বছরের ই-রিটার্ন দাখিলের বাস্তব উদাহরণ ও আইনি বিশ্লেষণসহ ধাপে ধাপে সবকিছু ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আশা করি, এই একটি লেখা পড়লেই WEDB সংক্রান্ত আপনার সকল বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। (আপনার মূল্যবান সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো)
প্রবাসীর আস্থার প্রতীক: ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড (WEDB) এবং আয়কর রিটার্ন দাখিলের সম্পূর্ণ গাইড (২০২৫-২০২৬)
১. ভূমিকা: কেন এই আলোচনা?
বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, লাভজনক এবং আস্থার প্রতীক হলো ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড (Wage Earners Development Bond – WEDB)।
এই বন্ডের প্রধান আকর্ষণ হলো এর সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা। অর্থাৎ, এর মূল বিনিয়োগ এবং অর্জিত মুনাফা—উভয়ের উপরেই কোনো আয়কর দিতে হয় না।
কিন্তু এই “করমুক্ত” শব্দটিই অনেক সময় করদাতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু এতে কোনো কর নেই, তাই এটি হয়তো আয়কর রিটার্নে দেখানোরও কোনো প্রয়োজন নেই। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং এটি আপনার আয়কর রিটার্নকে ত্রুটিপূর্ণ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।
আয়কর আইন, ২০২৩ প্রবর্তনের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) রিটার্নের স্বচ্ছতা এবং আয়ের উৎসের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। একজন করদাতার সকল প্রকার আয় (করযোগ্য বা করমুক্ত) এবং সকল সম্পদ রিটার্নে ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক।
এই প্রবন্ধে আমরা ‘চাকুরীর বিধানাবলী’ প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের আইনি ভিত্তি বিশ্লেষণ করব এবং ধাপে ধাপে দেখাবো কীভাবে ২০২৫-২০২৬ কর বছরের ই-রিটার্নে (e-Return) এই বন্ডের মুনাফা, মূলধন এবং উৎস নির্ভুলভাবে প্রদর্শন করতে হয়।
২. ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড (WEDB) কী?
ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড হলো মূলত প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি ঋণ চুক্তি। যখন কোনো প্রবাসী এই বন্ড কেনেন, তিনি কার্যত সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রায় (যেমন: মার্কিন ডলার, পাউন্ড স্টার্লিং) ঋণ দেন এবং সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তাকে উচ্চ হারে সুদসহ (মুনাফা) মূল অর্থ ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়।
এর বিশেষত্ব ও প্রধান সুবিধা:
- টার্গেট অডিয়েন্স: শুধুমাত্র প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকগণ।
- বিনিয়োগের মুদ্রা: বৈদেশিক মুদ্রায় (USD, GBP ইত্যাদি) ক্রয় করতে হয়।
- মুনাফার হার: আকর্ষণীয় এবং উচ্চ হার (বর্তমানে মেয়াদান্তে ১২% সরল মুনাফা)।
- মেয়াদ: সাধারণত ৫ (পাঁচ) বছর।
- মূল আকর্ষণ (কর সুবিধা):
-
- মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত: বন্ড থেকে প্রাপ্ত লক্ষ লক্ষ টাকার মুনাফার উপর ১ (এক) টাকাও আয়কর দিতে হয় না।
- মূল বিনিয়োগ করমুক্ত: আপনি যত টাকা বিনিয়োগ করেছেন, সেই মূলধনের উপর কোনো কর নেই।
- বিনিয়োগের উৎস করমুক্ত: যেহেতু এটি রেমিট্যান্স দিয়ে কেনা হয়, তাই এই টাকার উৎসের উপরেও কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় না (নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে)।
- স্বয়ংক্রিয় পুনঃবিনিয়োগ: মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে।
আইনি উৎস ও নির্ভরযোগ্যতা:
এই বন্ড সরাসরি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যু করা হয় এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর (National Savings Directorate – NSD) এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে। এর গ্যারান্টি স্বয়ং সরকার প্রদান করে, ফলে এটি যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্কিমের চেয়েও বেশি সুরক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য। এর করমুক্ত সুবিধার বিষয়টি আয়কর আইন, ২০২৩ এবং সংশ্লিষ্ট S.R.O. (Statutory Regulatory Order) দ্বারা সুরক্ষিত।
৩. আয়কর আইনের মূল দর্শন: কেন করমুক্ত আয়ও রিটার্নে দেখাতে হয়?
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আয়কর আইনের মূল উদ্দেশ্য শুধু কর আদায় নয়, বরং একজন নাগরিকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
১. সম্পদের সামঞ্জস্য (Wealth Reconciliation): ধরুন, আপনি এ বছর বন্ড থেকে ৫ লক্ষ টাকা মুনাফা পেলেন এবং সেই টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনলেন। আপনি যদি রিটার্নে এই ৫ লক্ষ টাকার মুনাফা (আয়) না দেখান, কিন্তু গাড়ি (সম্পদ) দেখান, তবে কর অফিস প্রশ্ন করবে, “এই গাড়ি কেনার টাকা আপনি কোথায় পেলেন?”। আপনার সম্পদ বৃদ্ধির (গাড়ি) সাথে আপনার আয়ের (মুনাফা) কোনো মিল থাকবে না। করমুক্ত আয় প্রদর্শন করলে এই হিসাবটি সহজেই মিলে যায়।
২. মোট আয় প্রদর্শন (Disclosure of Total Income): আইন অনুযায়ী, করদাতাকে তার “মোট আয়” (Total Income) প্রদর্শন করতে হয়, শুধু “করযোগ্য আয়” (Taxable Income) নয়। করমুক্ত আয় আপনার মোট আয়েরই অংশ।
৩. আইনি বাধ্যবাধকতা: আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, সকল প্রকার আয় (করযোগ্য, করমুক্ত, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত) রিটার্নে প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এটি না করা “তথ্য গোপন” (Concealment of Information) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যার জন্য জরিমানা হতে পারে।
৪. WEDB সংক্রান্ত তিনটি মূল আইনি ধারণা (The Three Pillars of Reporting)
আপনার আয়কর রিটার্নে WEDB সংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শনের জন্য এই তিনটি বিষয়কে আলাদাভাবে বুঝতে হবে। পুরো রিটার্ন প্রক্রিয়াটি এই তিনটি ধারণার উপর দাঁড়িয়ে আছে।
pillar ১: অর্জিত মুনাফা (The Profit)
- এটি কী? এটি আপনার “আয়” (Income)।
- আইনি প্রকৃতি: করমুক্ত আয় (Exempted Income)।
- রিটার্নে কোথায় যাবে? এটি রিটার্নের “আয়” (Income) ট্যাবের অধীনে “কর অব্যাহতি প্রাপ্ত ও করমুক্ত আয়” (Exempted and Tax-Free Income) সেকশনে বসবে।
pillar ২: মূল বিনিয়োগ (The Principal)
- এটি কী? এটি আপনার “সম্পদ” (Asset)।
- আইনি প্রকৃতি: একটি আর্থিক বিনিয়োগ (Financial Investment)।
- রিটার্নে কোথায় যাবে? এটি রিটার্নের “পরিসম্পদ ও দায়” (Assets and Liabilities) বা IT-10B ট্যাবের অধীনে “বিনিয়োগ” (Investments) সেকশনে বসবে।
pillar ৩: বিনিয়োগের উৎস (The Source)
- এটি কী? নতুন বন্ড কেনার টাকার উৎস।
- আইনি প্রকৃতি: সাধারণত “বৈদেশিক রেমিট্যান্স” (Foreign Remittance)।
- রিটার্নে কোথায় যাবে? এটি রিটার্নের “সামঞ্জস্য” (Reconciliation) বা IT-10BB ট্যাবের অধীনে “তহবিলের উৎস” (Source of Fund) সেকশনে বসবে।
এই তিনটি বিষয় যদি আপনি রিটার্নে সঠিকভাবে সমন্বয় করতে পারেন, তবে আপনার রিটার্ন হবে শতভাগ নির্ভুল ও স্বচ্ছ।
৫. আইনি ভিত্তি: আয়কর আইন, ২০২৩ এর বিশ্লেষণ
পেশাদার আয়কর আইনজীবী এবং পরামর্শকদের জন্য, WEDB-এর করমুক্ত সুবিধার সুনির্দিষ্ট আইনি ভিত্তি জানা অপরিহার্য।
১. ষষ্ঠ তফসিল (Sixth Schedule), পার্ট-১:
- আইন: আয়কর আইন, ২০২৩ (Income Tax Act, 2023)।
- বিশ্লেষণ: এই আইনের ষষ্ঠ তফসিলের পার্ট-১ এ “সম্পূর্ণভাবে কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়সমূহ” (Incomes fully exempted from tax) এর তালিকা দেওয়া আছে।
- প্রাসঙ্গিকতা: ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, এবং ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড থেকে প্রাপ্ত মুনাফা এই তফসিলের আওতায় সম্পূর্ণ করমুক্ত। রিটার্নে “কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়” অংশে দেখানোর সময় এই তফসিলের রেফারেন্সটিই যৌক্তিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
২. রেমিট্যান্স সংক্রান্ত পরিপত্র (NBR Circulars on Remittance):
- আইন: আয়কর আইন, ২০২৩ এর সংশ্লিষ্ট ধারা এবং বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত এনবিআর পরিপত্র।
- বিশ্লেষণ: আইন অনুযায়ী, বৈধ পথে (ব্যাংকিং চ্যানেল) আসা প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের উপর কোনো আয়কর প্রযোজ্য নয়।
- প্রাসঙ্গিকতা: যখন কোনো প্রবাসী WEDB ক্রয় করেন, তখন তিনি যে রেমিট্যান্স পাঠান, সেই অর্থের উৎস নিয়েও কর বিভাগ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না। IT-10BB (সামঞ্জস্য) ফর্মে “Foreign Remittance” কলামটি এই অর্থের বৈধ উৎস প্রমাণের প্রধান হাতিয়ার।
৩. জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন (NSD Notifications):
- উৎস: জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়।
- বিশ্লেষণ: এই বন্ড বিক্রয়ের সময়ই এর নীতিমালায় (Prospectus) করমুক্ত সুবিধার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে।
- প্রাসঙ্গিকতা: এটি কর আপিল বা নিরীক্ষার সময় সহায়ক নথি (Supporting Document) হিসেবে কাজ করে।
পেশাদার নোট: আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী, করমুক্ত সুবিধার জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি যদি এই করমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল করে এই আয় প্রদর্শন করতে হবে।
৬. বাস্তব উদাহরণ: তিনটি ভিন্ন পরিস্থিতি (Scenario Analysis)
আসুন, ২০২৫-২০২৬ কর বছরের (অর্থাৎ ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়কাল) জন্য তিনটি কাল্পনিক কিন্তু বাস্তবসম্মত উদাহরণ দেখি।
➡ উদাহরণ-১: জনাব রহমান (প্রথমবার বিনিয়োগ)
- পরিচিতি: জনাব রহমান, সৌদি আরবের একজন প্রবাসী।
- লেনদেন (এই কর বছরে): তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে এসে তার রেমিট্যান্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকার WEDB প্রথমবার ক্রয় করেন।
- করণীয়:
- মুনাফা: যেহেতু এটি নতুন বিনিয়োগ, এই বছরে তিনি এখনো কোনো মুনাফা পাননি। তাই “আয়” ট্যাবে কিছু দেখানোর নেই।
- সম্পদ: তাকে “পরিসম্পদ ও দায়” ট্যাবে ১০,০০,০০০ টাকা “বন্ডে বিনিয়োগ” হিসেবে দেখাতে হবে।
- উৎস: তাকে “সামঞ্জস্য” ট্যাবে “তহবিলের উৎস” হিসেবে ১০,০০,০০০ টাকা (বা তার মোট রেমিট্যান্স) “বৈদেশিক রেমিট্যান্স” হিসেবে দেখাতে হবে।
➡ উদাহরণ-২: মিসেস শায়লা (মুনাফা উত্তোলন ও নতুন বিনিয়োগ)
- পরিচিতি: মিসেস শায়লা, যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
- লেনদেন (এই কর বছরে):
- তার আগে থেকেই ১৫ লক্ষ টাকার বন্ড ছিল।
- এই বছর তিনি তার পুরনো বন্ড থেকে ১,৮০,০০০ (এক লক্ষ আশি হাজার) টাকা মুনাফা উত্তোলন করেছেন।
- তিনি এই বছর নতুন করে আরও ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকার WEDB কিনেছেন।
- করণীয়:
- মুনাফা: “আয়” ট্যাবে “করমুক্ত আয়” হিসেবে ১,৮০,০০০ টাকা দেখাতে হবে।
- সম্পদ: “পরিসম্পদ ও দায়” ট্যাবে তার মোট বন্ড দেখাতে হবে। (আগের ১৫ লক্ষ + নতুন ৫ লক্ষ) = ২০,০০,০০০ টাকা।
- উৎস: “সামঞ্জস্য” ট্যাবে “তহবিলের উৎস” হিসেবে নতুন বিনিয়োগের ৫,০০,০০০ টাকা (বা মোট রেমিট্যান্স) “বৈদেশিক রেমিট্যান্স” হিসেবে দেখাতে হবে।
➡ উদাহরণ-৩: জনাব কবির (বন্ডের মেয়াদপূর্তি ও পুনঃবিনিয়োগ)
- পরিচিতি: জনাব কবির, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী।
- লেনদেন (এই কর বছরে):
- তার ২০,০০,০০০ (বিশ লক্ষ) টাকার একটি বন্ডের ৫ বছর মেয়াদপূর্তি হয়েছে।
- তিনি মূলধন (২০ লক্ষ) এবং মুনাফা (ধরা যাক, ১২ লক্ষ) সহ মোট ৩২,০০,০০০ টাকা পেয়েছেন।
- তিনি সম্পূর্ণ টাকা না তুলে, প্রাপ্ত মূলধন ও মুনাফা থেকে আবার ২৫,০০,০০০ (পঁচিশ লক্ষ) টাকার বন্ড পুনঃবিনিয়োগ করেছেন।
- করণীয়:
- মুনাফা: “আয়” ট্যাবে “করমুক্ত আয়” হিসেবে ১২,০০,০০০ টাকা দেখাতে হবে।
- সম্পদ: “পরিসম্পদ ও দায়” ট্যাবে তার নতুন বিনিয়োগ ২৫,০০,০০০ টাকা দেখাতে হবে। (এখানে লক্ষণীয় যে তার পুরনো ২০ লক্ষ টাকার সম্পদ এখন আর নেই, নতুন ২৫ লক্ষ টাকার সম্পদ তৈরি হয়েছে)।
- উৎস: “সামঞ্জস্য” ট্যাবে তহবিলের উৎস জটিল। এখানে উৎস হবে:
- “করমুক্ত আয়” থেকে: ১২,০০,০০০ টাকা।
- “বন্ড নগদায়ন” (Encashment) থেকে: ২০,০০,০০০ টাকা।
- এই মোট ৩২ লক্ষ টাকা থেকে তিনি ২৫ লক্ষ টাকা পুনঃবিনিয়োগ করেছেন। এই হিসাবটি IT-10BB ফর্মে নিখুঁতভাবে মিলতে হবে।
৭. ই-রিটার্ন (e-Return) দাখিলের ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া (২০২৫-২০২৬ করবর্ষ)
আসুন, উপরের “উদাহরণ-২” (মিসেস শায়লা)-কে ভিত্তি ধরে ই-রিটার্ন পোর্টালের প্রতিটি ধাপে তথ্য পূরণ করি।
মিসেস শায়লার তথ্য:
- প্রাপ্ত মুনাফা: ১,৮০,০০০ টাকা
- নতুন বিনিয়োগ: ৫,০০,০০০ টাকা
- পুরনো বিনিয়োগ: ১৫,০০,০০০ টাকা
- মোট বন্ড (বর্তমান): ২০,০০,০০০ টাকা
✅ ধাপ ১: করমুক্ত ‘মুনাফা’ প্রদর্শন (আয় বা Income ট্যাব)
প্রথমে আপনাকে বন্ড থেকে প্রাপ্ত ১,৮০,০০০ টাকা মুনাফা দেখাতে হবে।
ই-রিটার্ন পোর্টাল সিমুলেশন (Income ট্যাব):
- ই-রিটার্নে লগইন করে “Return Submission” থেকে “Detailed Return” (বিস্তারিত রিটার্ন) এ যান।
- উপরের মেন্যু থেকে “Income” (আয়) ট্যাবে ক্লিক করুন।
- এখানে “Income from…” (আয়ের খাতসমূহ) দেখাবে। নিচের দিকে “Income Exempted from Tax and Tax-Free Income” (কর অব্যাহতি প্রাপ্ত ও করমুক্ত আয়) সেকশনটি খুঁজুন এবং তাতে ক্লিক করুন।
- একটি নতুন পাতা খুলবে। এখানে বিভিন্ন প্রকার করমুক্ত আয়ের তালিকা থাকবে।
ই-রিটার্ন ফর্ম সিমুলেশন:
সেকশন: কর অব্যাহতি প্রাপ্ত ও করমুক্ত আয় (Exempted and Tax-Free Income)
| আয়ের বিবরণ (Description of Income) | পরিমাণ (টাকা) (Amount in BDT) |
|---|---|
| ১. সরকারি বেতনভোগী কর্মকর্তার বিশেষ ভাতা… | [ 0 ] |
| … | … |
| ৮. সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ড হতে মুনাফা (যেমন WEDB, US Dollar Bond ইত্যাদি) (Profit from Govt. Securities or Bonds) | [ ১,৮০,০০০ ] |
| … | … |
করণীয়: মিসেস শায়লা উপরের “৮” নম্বর ঘরের পাশে ১,৮০,০০০ লিখবেন এবং “Save & Continue” চাপবেন।
ফলাফল: এই টাকাটি তার মোট আয়ের অংশ হিসেবে প্রদর্শিত হবে, কিন্তু এর উপর কোনো কর গণনা করা হবে না।
✅ ধাপ ২: ‘মূল বিনিয়োগ’ প্রদর্শন (পরিসম্পদ ও দায় বা Assets & Liabilities ট্যাব)
এখন মিসেস শায়লার মোট ২০,০০,০০০ টাকার বন্ড (সম্পদ) দেখাতে হবে।
ই-রিটার্ন পোর্টাল সিমুলেশন (Assets & Liabilities ট্যাব):
- উপরের মেন্যু থেকে “Assets and Liabilities (IT-10B)” (পরিসম্পদ ও দায়) ট্যাবে ক্লিক করুন।
- প্রথমে “Assets” (পরিসম্পদ) অংশটি আসবে।
- এই সেকশনের মধ্যে “Investment” (বিনিয়োগ) নামক একটি উপ-বিভাগ খুঁজুন।
ই-রিটার্ন ফর্ম সিমুলেশন:
সেকশন: পরিসম্পদ (Assets)
ক. আর্থিক সম্পদ (Financial Assets)
| সম্পদের বিবরণ (Description of Assets) | পরিমাণ (টাকা) (Amount in BDT) |
|---|---|
| ১. নগদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স (Cash and Bank Balance) | […] |
| ২. শেয়ার/ডিবেঞ্চার (Shares/Debentures) | […] |
| ৩. সঞ্চয়পত্র, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজ (Savings Certificates, Bonds and other Securities) | [ ২,০০,০০,০০০ ] |
| ৪. ডিপিএস, এফডিআর ইত্যাদি (DPS, FDR etc.) | […] |
করণীয়: মিসেস শায়লা “৩” নম্বর ঘরে তার মোট বন্ডের মূল্য (পুরনো ১৫ লক্ষ + নতুন ৫ লক্ষ = ২০ লক্ষ) লিখবেন: ২,০০,০০,০০০।
ফলাফল: এটি ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে তার মোট সম্পদ হিসেবে প্রদর্শিত হবে।
মুদ্রা রূপান্তর (Currency Conversion) সংক্রান্ত নোট:
বন্ড সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রায় (USD/GBP) কেনা হয়। কিন্তু রিটার্নে অবশ্যই বাংলাদেশি টাকায় (BDT) রূপান্তরিত মূল্য দেখাতে হবে।
- কোন তারিখের রেট? সাধারণত কর বছর শেষ হওয়ার তারিখের (অর্থাৎ ৩০ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত বিনিময় হার ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ ও যৌক্তিক। তবে, আপনি যে তারিখে ক্রয় করেছেন, সে তারিখের রেট ব্যবহার করলেও তা গ্রহণ করা হয়। ধারাবাহিকতা (Consistency) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
✅ ধাপ ৩: ‘বিনিয়োগের উৎস’ প্রদর্শন (সামঞ্জস্য বা Reconciliation ট্যাব)
এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে আপনি কর অফিসকে বোঝাবেন যে, আপনার সম্পদ কেন এবং কীভাবে বাড়লো।
মিসেস শায়লার সম্পদ গত বছরের তুলনায় ৫,০০,০০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে (কারণ তিনি নতুন বন্ড কিনেছেন)। তাকে এই ৫ লক্ষ টাকার উৎস দেখাতে হবে।
ই-রিটার্ন পোর্টাল সিমুলেশন (Reconciliation ট্যাব):
- উপরের মেন্যু থেকে “Reconciliation (IT-10BB)” (সামঞ্জস্য) ট্যাবে ক্লিক করুন।
- এই ফর্মটি দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত: “Source of Fund” (তহবিলের উৎস) এবং “Application of Fund” (তহবিলের ব্যবহার)।
ই-রিটার্ন ফর্ম সিমুলেশন: (IT-10BB)
সেকশন: তহবিলের উৎস (Source of Fund) (আপনার মোট টাকা কোথা থেকে এলো)
| উৎসের বিবরণ (Description of Source) | পরিমাণ (টাকা) (Amount in BDT) |
|---|---|
| ১. কর পরবর্তী আয় (Net Income after Tax) | […] |
| ২. করমুক্ত আয় (Exempted Income) | [ ১,৮০,০০০ ] (সিস্টেম এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধাপ-১ থেকে নিয়ে আসবে) |
| ৩. বৈদেশিক রেমিট্যান্স (Foreign Remittance) | [ ৫,০০,০০০ ] (বা তিনি মোট যত রেমিট্যান্স এনেছেন) |
| ৪. অন্যান্য প্রাপ্তি (Other Receipts) | […] |
| মোট উৎস (Total Source) | [ ৬,৮০,০০০ + অন্যান্য আয় ] |
সেকশন: তহবিলের ব্যবহার (Application of Fund) (আপনার টাকা কোথায় গেল)
| ব্যবহারের বিবরণ (Description of Application) | পরিমাণ (টাকা) (Amount in BDT) |
|---|---|
| ১. জীবনযাত্রার ব্যয় (Living Expenses) | […] |
| ২. সম্পদ বৃদ্ধি (Increase in Assets) | [ ৫,০০,০০০ ] (সিস্টেম এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধাপ-২ থেকে গণনা করবে, কারণ তার বন্ড ১৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ হয়েছে) |
| মোট ব্যবহার (Total Application) | [ ৫,০০,০০০ + জীবনযাত্রার ব্যয় ] |
করণীয়: মিসেস শায়লাকে অবশ্যই “বৈদেশিক রেমিট্যান্স” ঘরে কমপক্ষে ৫,০০,০০০ টাকা (বা তার মোট প্রাপ্ত রেমিট্যান্স) দেখাতে হবে।
ফলাফল: সিস্টেম যখন দেখবে যে তার “সম্পদ বৃদ্ধি” (৫ লক্ষ) এবং “জীবনযাত্রার ব্যয়” এর বিপরীতে তার যথেষ্ট “তহবিলের উৎস” (যেমন: করমুক্ত আয় ১.৮ লক্ষ + রেমিট্যান্স ৫ লক্ষ) রয়েছে, তখন “Difference” (পার্থক্য) শূন্য (০) দেখাবে এবং আপনার রিটার্নটি সামঞ্জস্যপূর্ণ (Reconciled) বলে গণ্য হবে।
৮. সাধারণ ভুলত্রুটি ও পেশাদার পরামর্শ
অভিজ্ঞতার আলোকে, সাধারণ করদাতা এবং অনেক সময় পেশাদাররাও কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন।
যে ৫টি ভুল করদাতারা প্রায়ই করেন:
- মুনাফা না দেখানো: “করমুক্ত” ভেবে মুনাফা একেবারেই রিটার্নে না দেখানো। এটি একটি বড় ভুল, যা নিরীক্ষায় (Audit) ধরা পড়লে তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন।
- শুধু নতুন বিনিয়োগ দেখানো: সম্পদের ঘরে শুধু এই বছর কেনা বন্ডের পরিমাণ (৫ লক্ষ) দেখানো। সঠিক নিয়ম হলো মোট (পুরনো + নতুন) বন্ডের মূল্য (২০ লক্ষ) দেখানো।
- রেমিট্যান্সের উৎস না দেখানো: নতুন বন্ড কিনলে (সম্পদ বাড়লে) অবশ্যই IT-10BB-তে সমপরিমাণ রেমিট্যান্স বা অন্য কোনো বৈধ উৎস দেখাতে হবে। তা না হলে আপনার রিটার্ন মিলবে না।
- মুদ্রা রূপান্তরে গড়মিল: ডলার বা পাউন্ডের মূল্য টাকায় রূপান্তর না করে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রার অংক বসিয়ে দেওয়া। এটি ভুল।
- মেয়াদপূর্তির হিসাব না মেলানো: বন্ডের মেয়াদপূর্তি হলে (উদাহরণ-৩ এর মতো), পুরনো সম্পদ থেকে তা বিয়োগ করা এবং নতুন সম্পদ হিসেবে তা যোগ করা জরুরি। অনেকেই পুরনো সম্পদ বিয়োগ করতে ভুলে যান।
নিরীক্ষা (Audit) মোকাবেলায় করণীয়: যেসকল দলিল সংরক্ষণ করবেন
ই-রিটার্নে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে হয় না, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনার কোনো প্রমাণ রাখতে হবে না। কর অফিস চাইলে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত আপনার কাছে যেকোনো সময় এই প্রমাণ চাইতে পারে। নিম্নলিখিত কাগজপত্রগুলো একটি ফাইলে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করুন:
- বন্ড ক্রয়ের সনদ (Certificate of Investment): প্রতিটি বন্ড কেনার মূল কপি।
- মুনাফা প্রাপ্তির প্রমাণ: মুনাফা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হলে সেই ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা মুনাফা উত্তোলনের স্লিপ।
- রেমিট্যান্সের প্রমাণ: বন্ড কেনার জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো টাকার ব্যাংক ক্রেডিট অ্যাডভাইস (Credit Advice) বা ওয়্যার ট্রান্সফারের (Wire Transfer) কপি।
- মেয়াদপূর্তির সনদ: বন্ড ভাঙানোর সময় প্রাপ্ত চূড়ান্ত হিসাব বিবরণী।
৯. উপসংহার: আস্থাশীল বিনিয়োগ, স্বচ্ছ রিটার্ন
ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড নিঃসন্দেহে প্রবাসীদের জন্য দেশের সেরা বিনিয়োগ মাধ্যম। সরকার আপনাকে এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান করেছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, এই করমুক্ত সুবিধার বিপরীতে আপনার দায়িত্ব হলো আয়কর রিটার্নে তা সঠিকভাবে প্রদর্শন করে স্বচ্ছতার প্রমাণ দেওয়া।
সঠিকভাবে প্রদর্শিত একটি রিটার্ন শুধু আপনার আইনি জটিলতা এড়ায় না, বরং দেশের অর্থনীতিতে আপনার অবদানের একটি স্বচ্ছ চিত্রও তুলে ধরে। আপনার কষ্টার্জিত টাকায় কেনা বন্ড যেমন সুরক্ষিত থাকুক, আপনার আয়কর রিটার্নও তেমনি স্বচ্ছ ও নির্ভুল থাকুক।
১০. বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: আমি যদি গত ৫ বছর বন্ডের মুনাফা না দেখাই, এখন কী করব?
উত্তর: পেশাদার পরামর্শ হলো, এই বছর রিটার্ন দাখিলের সময় বিগত বছরগুলোর না দেখানো মুনাফা “পূর্ববর্তী বছরের আয়” (Income from Earlier Years) বা “অন্যান্য উৎস হতে আয়” (Income from Other Sources) হিসেবে দেখিয়ে প্রযোজ্য কর (যদি থাকে) ও সারচার্জ সহ প্রদান করা, অথবা একজন দক্ষ আয়কর আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে “আপডেটেড রিটার্ন” দাখিলের সুযোগ গ্রহণ করা। তবে WEDB-এর মুনাফা যেহেতু করমুক্ত, তাই IT-10BB-তে “Prior Year’s Exempted Income” হিসেবে দেখানোর একটি সুযোগ থাকতে পারে, যা আপনার সম্পদ বিবরণী মেলাতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন ২: আমার বন্ড ডলারে কেনা, আমি কি সম্পদের মূল্য ডলারে দেখাতে পারব?
উত্তর: না। আয়কর রিটার্নের সকল হিসাব বাংলাদেশি টাকায় (BDT) দেখাতে হবে। আপনাকে অবশ্যই ৩০ জুন তারিখের বা বন্ড ক্রয়ের তারিখের বিনিময় হার অনুযায়ী ডলারে কেনা বন্ডের মূল্য টাকায় রূপান্তর করে দেখাতে হবে।
প্রশ্ন ৩: আমি প্রবাসী, আমার কোনো TIN নেই। আমার কি রিটার্ন দিতে হবে?
উত্তর: যদি বাংলাদেশে আপনার কোনো করযোগ্য আয় না থাকে এবং আপনি কোনো নির্দিষ্ট খাতের (যেমন: গাড়ি, ফ্ল্যাট) মালিক না হন, তবে শুধু WEDB বন্ড থাকার কারণে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, যদি আপনি এই বন্ডের বিপরীতে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চান, বা দেশে অন্য কোনো সম্পদ কেনেন, তখন আপনার TIN এবং রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন হবে।
প্রশ্ন ৪: WEDB বন্ডের মুনাফা দিয়ে জমি কিনলে কি সেই জমিও করমুক্ত হবে?
উত্তর: না। শুধু WEDB বন্ডের মুনাফা করমুক্ত। কিন্তু আপনি সেই করমুক্ত মুনাফার টাকা দিয়ে যখন অন্য কোনো সম্পদ (যেমন: জমি, ফ্ল্যাট, গাড়ি) কিনবেন, তখন সেই নতুন সম্পদের উপর প্রযোজ্য সকল আইন (যেমন: রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সম্পদের উপর সারচার্জ) প্রযোজ্য হবে। তবে, জমি কেনার টাকার উৎস হিসেবে আপনি এই “করমুক্ত বন্ডের মুনাফা”-কে বৈধ উৎস হিসেবে দেখাতে পারবেন।
#####################
লেখাটি ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি, এটি আপনার রিটার্ন দাখিলে সহায়তা করবে।
আয়কর রিটার্ন, WEDB বা অন্য যেকোনো জটিল বিষয়ে নির্ভুল, পেশাদার এবং সাশ্রয়ী মূল্যে আমার সহায়তা প্রয়োজন হলে, যেকোনো সময় আমার পেইজের ইনবক্সে (Inbox) মেসেজ দিতে পারেন। আমি নিজে আপনার রিটার্নটি পর্যালোচনা ও দাখিল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
সবার জন্য শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদান্তে, মুহম্মদ জিয়াউর রহমান ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার (ITP) এনবিআর (NBR) অনুমোদিত WhatsApp: 01710-935-356 TaxCraft Consulting
