Related Articles
English Quotation:
“The best teachers are those who show you where to look but don’t tell you what to see.” – Alexandra K. Trenfor
বাংলা অনুবাদ:
“সেরা শিক্ষক তাঁরাই, যাঁরা আপনাকে দেখিয়ে দেন কোথায় তাকাতে হবে, কিন্তু কী দেখতে হবে তা বলে দেন না।” – আলেকজান্ড্রা কে. ট্রেনফর
ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ:
এই উক্তিটি শিক্ষকতার এক গভীর দর্শনকে তুলে ধরে। একজন প্রকৃত শিক্ষকের কাজ তথ্য বা উত্তর মুখস্থ করানো নয়, বরং শিক্ষার্থীর মনে কৌতুহল জাগিয়ে তোলা এবং তাকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার পথ দেখানো। তিনি জ্ঞানের দরজা খুলে দেন, কিন্তু সেই ঘরের ভেতরের সৌন্দর্য আবিষ্কার করার দায়িত্ব তিনি শিক্ষার্থীর হাতেই ছেড়ে দেন। এতে শিক্ষার্থীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
শিক্ষক: আফসানা হক (কাল্পনিক নাম)
চট্টগ্রামের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা। তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি ছিল গতানুগতিক ধারার বাইরে। তিনি শিক্ষার্থীদের কেবল কবিতার ভাবার্থ বা গল্পের সারমর্ম শেখাতেন না, তিনি চাইতেন শিক্ষার্থীরা যেন প্রতিটি লেখার গভীরে প্রবেশ করে এবং নিজের মতো করে তার অর্থ খুঁজে নেয়।
শিক্ষার্থী: ফারজানা চৌধুরী (কাল্পনিক নাম)
অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্রী। ক্লাসের পরীক্ষায় সবসময় ভালো ফল করে, কিন্তু তার সব উত্তরই থাকে পাঠ্যবই বা গাইডবইয়ের হুবহু অনুলিপি। নিজের মতো করে কিছু লেখার বা ভাবার ক্ষেত্রে তার ছিল প্রচণ্ড জড়তা ও ভয়। তার ধারণা ছিল, বইয়ের বাইরে কিছু লিখলেই বুঝি নম্বর কাটা যাবে।
অনুপ্রেরণার গল্প:
বার্ষিক পরীক্ষার আগে আফসানা ম্যাডাম ক্লাসে একটি ব্যতিক্রমী অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। তিনি বললেন, “তোমার জানালা দিয়ে যা দেখা যায়, তা নিয়ে একটি রচনা লেখো।” সবাই যখন গাছ, পাখি, আকাশ বা রাস্তা নিয়ে লিখতে শুরু করল, ফারজানা পড়ল মহাচিন্তায়। তার জানালা দিয়ে কেবল পাশের বাড়ির একটি পুরোনো, রঙচটা দেয়াল দেখা যায়। এই নিষ্প্রাণ দেয়াল নিয়ে কী লেখার আছে, তা সে ভেবে পেল না। পরদিন সে মন খারাপ করে ম্যাডামকে তার সমস্যার কথা জানাল। আফসানা ম্যাডাম সব শুনে হাসলেন। তিনি বললেন, “আমি তো তোমাকে সুন্দর কিছু নিয়ে লিখতে বলিনি। আমি বলেছি, যা দেখো তা নিয়ে লিখতে। এবার একটু অন্যভাবে দেখো তো।” তিনি ফারজানাকে কিছু প্রশ্ন করলেন, “এই দেয়ালটা কতদিন ধরে আছে? কত ঋতু সে পার করেছে? কত ঝড়-বৃষ্টি সে নীরবে সহ্য করেছে? তার গায়ে যে শ্যাওলা জমেছে, তার মাঝে কি কোনো গল্প লুকিয়ে নেই? ওই যে দেয়ালে একটা চড়ুই পাখি বসেছে, দেয়ালটা কি তার আশ্রয় নয়?” ম্যাডামের প্রশ্নগুলো ফারজানার ভাবনার জগৎকে পুরোপুরি বদলে দিল। সে প্রথমবার একটি নিষ্প্রাণ দেয়ালের দিকে নতুন চোখে তাকাল। সে তার লেখায় সেই দেয়ালকে একজন নীরব পর্যবেক্ষকের রূপ দিল, যে বছরের পর বছর ধরে মানুষের হাসি-কান্না, ঋতুর পরিবর্তন এবং সময়ের ছুটে চলাকে নীরবে ধারণ করে আছে। তার লেখাটি সেই বছরের সেরা লেখা হিসেবে নির্বাচিত হলো।
ইতিবাচক বার্তা:
এই কাহিনি আমাদের শেখায় যে, শিক্ষকের কাজ কেবল পথ দেখানো, পথে হাঁটা নয়। আফসানা হকের মতো শিক্ষকেরাই পারেন শিক্ষার্থীদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা ভেঙে দিতে। তাঁরা শিখিয়ে দেন যে, সৌন্দর্য বা জ্ঞান কেবল নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় থাকে না, বরং সঠিক দৃষ্টি দিয়ে তাকালে একটি সাধারণ জিনিসের মাঝেও অসাধারণ গল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আজ ফারজানা একজন জনপ্রিয় সাংবাদিক। সে বলে, “আফসানা ম্যাডাম আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে খবরের ভেতরের খবরটা দেখতে হয়, যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না।”
আপনার জীবনের এমন কোনো শিক্ষকের গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যিনি আপনাকে পৃথিবীকে নতুন চোখে দেখতে শিখিয়েছেন। ‘খোলাবই’-এর পাতায় আমরা তাঁদের অবদানকে তুলে ধরতে চাই।
About The Author
Share this:
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on Threads (Opens in new window) Threads
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to share on Telegram (Opens in new window) Telegram
- Click to print (Opens in new window) Print